প্রযুক্তি হলো কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সমষ্টি ,যা পন্য বা সেবা উৎপাদনে বা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কোনো যন্ত্র বা প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষতাকে ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনকে সহজীকরনের মাধ্যমকে প্রযুক্তি বলে।
বিভিন্ন প্রযুক্তির সম্মিলিত রূপ হল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রযুক্তির বদৌলতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করি। প্রযুক্তি পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। শিক্ষা, সামাজিকীকরণ,ব্যবসা চিকিৎসা সহ জীবনের প্রতিটি জরুরী ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির এই ব্যবহার অনস্বীকার্য।
প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারলে প্রায় সকল কিছুতেই সহজে উন্নয়ন করা সম্ভব। যে দেশ যত বেশি প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত সে দেশ তত বেশি উন্নয়নশীল।
তবে অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আমরা আমাদের জীবনকে প্রযুক্তির চাদরে ঢেকে ঠান্ডা করে নিতে পারি। কৃষি কাজে, কৃষি প্রযুক্তি। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষ প্রযুক্তি সহ সকল ক্ষেত্রেই সকল প্রযুক্তি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা:
যতটা ভালো, তার অন্তরে ঢুকে দেখ ততটাই খারাপ অবস্থা পেতে পারো। ঠিক যেন সেই উপদেশ ই মানুষের সকল ক্ষেত্রে সম্পুর্ন রূপে লেগে যায়।
আমরা উপর থেকে আসলে যতটা সহজ আর সরল মনে করে নেই। বাস্তবতা আমাদের তেমন ই কঠিন আর খারাপ অবস্থার সামনে ফেলে দেয়।
আমরা মোবাইল নিয়ে পড়া খুজতে খুজতে কখন যে গেম বা সোস্যাল মিডিয়ায় চলে যাই, সেটি নিজেরাও ভালো করে বুঝে উঠতে পারি না। ঠিক এভাবেই প্রযুক্তি আমাদের ভালো কাজের ফাকে খারাপের অবস্থান করে নিয়েছে।
আগের দিনে গরুর গাড়িতে মানুষ চলাচল করতো, তখন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতো না, তেমন মানুষের গন্তব্য টাও অনেক পরিমানে দুরে ছিল, যা প্রযুক্তির ছোয়ায় আমাদের মুহুর্তের পথ। সেই সাথে আমাদের সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে ভয়াবাহ মৃত্যুর মিসিলে পরিনিত হয়েছে।
আসলেই ভালোর ভেতরে খারাপ আর খারাপের ভেতরে ভালো লুকিয়ে থাকে। তবে আমাদের উচিৎ সঠিক ব্যবাহর। আমরা চাইলে খারাপটাকে চাপিয়ে রেখে ভালোটার ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারি।
প্রযুক্তির উপকারিতা:
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং গতিময় করে তুলেছে। প্রযুক্তির হাজারো উপকারিতার মধ্যে কিছু উপকারিতার নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. যোগাযোগ সহজ করা: প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে। দ্রুত যানসহ মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি দূরত্বকে অতিক্রম করে তাক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে সহজ এবং আনন্দদায়ক।
২. স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন: চিকিৎসক ও চিকিৎসা গবেষণা, রোগ নির্ণয় ও রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি নতুনত্ব ওষুধ তৈরিতে প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সহজ করে তুলেছে।
৩. জ্ঞান অর্জনের সুযোগ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই তথ্য এবং শিক্ষা উপকরণ পাওয়া যায় ,যা জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম গুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি কে বাড়িয়ে তুলছে।
৪. তথ্য সংগ্রহ: প্রযুক্তির সাহায্যে বড় পরিমাণের তথ্য সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব। ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ,ডাটাবেজ , ইনফরমেশন সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যের এক্সেস পাওয়া যায়।
৫: কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন: আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ।
৬. সময় ও শ্রম সাশ্রয়: প্রযুক্তির ব্যবহার করে দ্রুত ও কম খরচে সম্পাদন করা সম্ভব হয়। যা প্রযুক্তির ব্যবহার না করলে লম্বা সময়ে একাধীক লোকের শ্রমের প্রয়োজন হতো।
৭. ব্যবসায়িক উন্নতি: প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়ের কাজ প্রশাসন করা সহজ হয়ে যায়। ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, সংস্থার ব্যবস্থাপনা ,ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত হয়ে থাকে।
৮. বিনোদন: টিভি, গেমস ,মুভি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম মানুষের বিনোদনের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। যা মানুষের মন ভালো করার এবং ভালো রাখার অন্যতম উপায় হিসেবে কাজ করে।
প্রযুক্তির অপকারিতা:
আমরা যেহেতু প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা সমন্ধে যেনে নিয়েছি, সেই সাথে তার অপকরিতা বা ক্ষতিকর বিষয়ে ও জেনে নেওয়া ভালো। কারন আমরা যখন কিছু ব্যবহার করবো, তখন সেখানে উপকারী এবং ক্ষতিকর বিষয়ে জেনে নিলে উপকারী বিষয় যেমন কাজে লাগাতে পারবো, তেমন ক্ষতিকর বিষয় থেকেও সহজে বেচে থাকতে পারবো প্রযুক্তির নানাবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু অপকারিতা রয়েছে:
১. নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ঝুঁকি: প্রযুক্তির ব্যবহার করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডিজিটাল ডাটা ব্যবহারের কারণে ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। সাইবার নেটওয়ার্ক এটাক ,হ্যাকিং, ম্যালওয়ার আক্রমণ ইত্যাদি ঘটতে পারে।
২. মানবিক সম্পর্কের ক্ষতি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবার ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক দুর্বল করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত সময় ব্যয়: আমাদের প্রয়োজনীয় সময় গুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াতে, ভিডিও গেম খেলতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাতেই শেষ হয়ে যায়। যা আমাদের জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
৪. কর্মক্ষমতার হ্রাস: প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় মানুষ দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে অনেক কাজ মেশিনের মাধ্যমে সম্পাদন করার ফলে মানুষ কাজ হারাতে পারে।
৫.স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে কাটানোর ফলে মস্তিষ্ক ও শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির ফলে বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
৬. অতিরিক্ত খরচ: অনেক ক্ষেত্র প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক ব্যয়বহুল।যার ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে।
৭. কালচারের পরিবর্তঃ নিজেদের ধর্ম বর্ন ভলে গিয়ে এবং নিজেদের সাংস্কৃতি সমন্ধে না জেনে ভিন দেশের কালচারে বিমুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে সাধারন মানুষ।
কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি হলো:
যেহেতু আমরা প্রযুক্তির উপকার ও অপকার সমন্ধে জেনে গেছি। তাই এবার আমরা প্রযুক্তির বিশেষ কিছু প্রকার ভেদ সমন্ধে জেনে নিতে পারি, সেই সাথে তার কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়ে ও জানতে পারি, যা আমাদের বিশেষ ভাবে প্রয়োজনের তাগিদ করবে।
১. মোবাইল: যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য এবং কোন কলে কথা বলার জন্য আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যেকোনো প্রান্তের খবর খুব সহজেই নিতে পারি। তবে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
মোবাইলের মাধ্যমে আমরা উচ্চ মানের ছবি ও ভিডিও এডিটিং করতে পারি। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো তথ্য এবং লোকেশন সহজে খুঁজে বের করা যায়।
২.টেলিমেডিসিন:টেলিমেডিসিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডাক্তাররা দূরবর্তী স্থান থেকে রোগীদের সেবা প্রদান করতে পারে। এটি বিশেষ করে গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলের জন্য উপকারী, যেখানে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন।
৩. ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: প্রযুক্তির অন্যতম বড় অবদান হলো অনলাইন শিক্ষার প্রসার। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, তারা শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় ও কার্যকরী করে তুলেছে। যেকোনো বই বা গবেষণাপত্র যেকোনো ফরমেটে সহজেই পেতে পারে।
৪. টেলিভিশন: দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খবর এবং বিনোদনের জন্য আমরা টেলিভিশন ব্যবহার করি।
৫. কম্পিউটার: যেকোন ধরনের হিসাব-নিকাশ এবং অফিসের বিভিন্ন ধরনের কাজ ও ফ্রিল্যান্সিং করতে আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি। ডকুমেন্ট তৈরি ও সংরক্ষণ ,ডাটা বিশ্লেষণ, ইমেইল ও ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি কাজ কম্পিউটার মাধ্যমে করা হয়।
সংক্ষিপ্ত
সংক্ষিপ্ত কথায় উপকারের বিপরিতেই অপকার। তাই যেখানে উপকার থেমে যাবে, সেখান থেকেই অপকার শুরু হয়ে যাবে। আর অপকার না করলেই সেটি উপকার করবে। সেখানেই প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা কার্যকর হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনের কল্যাণ ডেকে এনেছে।প্রযুক্তির ভালো এবং খারাপ দিকগুলো একই সাথে আছে এবং আমাদের উপযুক্ত উপকার ও সতর্কতা প্রয়োজন। এর ব্যবহারের সময় আমাদের উপকারগুলো উপভোগ করতে এবং খারাপ দিকগুলো মেটাতে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও গতিশীল করতে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশন এবং সমাজের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করা যাবে না।
প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সকল তথ্য পেতে এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও আপডেট সমন্ধে সবার আগে যেনে নিতে আমাদের সাইটের নটিফেকেশন চালু করে রাখতে পারেন এবং সেই সাথে নিচের সোস্যাল মিডিয়ায় ফলো করে রাখতে পারেন।