লেবু একটি প্রিয় এবং উপকারী ফল। এটি প্রায় সকল সিজনেই পাওয়া যায়। এই ফলের টক স্বাদ যুক্ত রসালো হওয়ায় এর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। আমরা একই পোস্টে লেবুর সমন্ধে সকল তথ্য় শেয়ার করতে পারি না। আর করলেও সেটি সবার জন্য হেল্প ফুল হতে পারবে না। এজন্যই একাধীক পোস্টে আমরা লেবুর উপকারীতা সমন্ধে আমাদের প্রিয় পাঠকদের জানিয়ে দিবো।
লেবুতে কি কি রাসায়নিক গুনাগুন থাকে?
টক স্বাদ যুক্ত একটি ফল হচ্ছে লেবু। অধীকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা জানি টক স্বাদ যুক্ত ফলগুলো হচ্ছে এসিড যুক্ত ফল। সেখানে লেবুতেও টক এর পরিমান অনেক বেশি থাকায় সাভাবিক ভাবেই বলা চলে, এটিও একটি এসিড যুক্ত ফল। তবে কিছু কিছু বিক্রিয়ায় এটি ক্ষারের প্রক্রিয়ায় চলে যেতে পারে। বিশেষ করে লেবুতে যে সকল উপাদান থাকে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- ভিটামিন C
- সাইট্রিক অ্যাসিড
- হেসপেরিডিন
- ডি-লিমোনিন
- পেকটিন
- অ্যারোমেটিক অয়েলস
এই উপাদান গুলো আমাদের দেহের উপরে বিভিন্ন ভাবেই উপকারী ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে এর মধ্যে আমরা আরো কিছু বিশেষ বিক্রিয়ায় আরো কিছু উপাদান পেতে পারি। তার মধ্যে যখন লেবুতে গড়ম পানি বা ঠান্ডা পানি দেওয়া হয়, তখন সেটিতে তাপের পরিবর্তনের ফলে বিশেষ কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে আর বিশেষ কিছু নতুন উপাদান তৈরি হয়।
লেবু খাওয়ার উপকারিতা
এটি হচ্ছে সাভাবিক ভাবে লেবু খাওয়ার উপকারীতা সমন্ধে বলতে গেলে যা যা উঠে আসে। আমরা জানি লেবু খাওয়ার ফলে মুখে রূচির সৃষ্টি হয়। আর এই কাজটি তখন ই হয়, যখন আমাদের মুখ বিভিন্ন স্বাদের কারনে একটু অস্বস্তি বোধ করে আর সেই অবস্থায় আমরা লেবু খাই, তখন আমাদের মুখে ভিটমিন সি এর বিশেষ প্রভাব ফেলে এবং আমাদের অন্যান্য স্বাদ লেবুতে থাকা এসিডের মাধ্য়মে নষ্ট হয়ে হালকা টক হয়ে আসে, এটি পরবর্তি খাবারের স্বাদকেও নষ্ট করে, তবে যখন পরবর্তি সময়ে লেবুর রসের চেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া হয়, তখন লেবুর রসের প্রভাব কেটে যায়।
এছাড়াও লেবুর রয়ের ফলে আমাদের দেহে আরো বিশেষ কিছু উপকারিতা পেতে পারি। যে সকল উপকারীতা আমরা পেতে পারি সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্যতম যে উপকারীতা সেগুলো হলোঃ
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- সাইট্রিক অ্যাসিড হজমে সাহায্য করে
- গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমে আরাম দেয়
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- ভিটামিন C ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ দূর করে
- বয়সের ছাপ কমায়
- কিডনি স্টোন প্রতিরোধ করে
- লেবু লিভার পরিষ্কার করে
- শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
এটি সাধারনত আমরা যে কোন ভাবেই খেতে পারি। বিশেষ করে, বিভিন্ন খাবারের সাথে সালাত হিসেবে খেতে পারি, আবার লেবুর রস খেতে পারি। অথবা আমরা বিভিন্ন ধরনের লেবুর সরবত বা লেবু চা এর মধ্যে খেতে পারি।
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
যেমন টা আমরা জানি, বিভিন্ন ভাবে লেবু খাওয়া যায়, তবে আমরা প্রায় ই লেবুকে খাবারের সাথে সালাত হিসেবে খেয়ে থাকি, যখন লেবু খাবারের সাথে সাভাবিক ভাবেই আমাদের শরিরে প্রবেশ করে, যদিও তখন ও খাবারের সাথে সেটি মিশে যায় ( রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে) তবে ঠান্ডা পানিতে বা গড়ম পানিতে এটির প্রভাবের নিশ্চিত কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে।
আমরা আগামী কোন পোস্টে লেবু গড় পানিতে আর চা য়ের সাথে খাওয়ার উপকারীতা এবং ক্ষতিকারিতা সমন্ধে জানিয়ে দিব। আজ বড্ড করে লেবু ঠান্ডা পানিতে খাওয়ার উপকারিতা সমন্ধে জেনে নিবো।
লেবু পানি বা শরবতের মাধ্যমে শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সাভাবিক পানি, যা গড়ম বা ঠান্ডা ছাড়াই আমরা সবসময় পান করি, সেখানে ব্যবহার করার কথা বলা রয়েছে।
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা গুলো আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে নিচে তুলে ধরলাম। এছাড়াও আমরা লেবুর অন্যান্য ব্যবহার সমন্ধেও আরো পোস্ট করেছি, বিশেষ করে লেবু ত্বকে ব্যবহার করার উপকারিতা সমন্ধেও পোস্ট আছে, দেখে আসতে পারেন।
- গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক
- হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর
- ঠান্ডা লেবু পানি শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ
- ক্লান্তি দূর করে, মানসিক প্রশান্তি দেয়
- মন-মেজাজ ভালো রাখে
- লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড লিভার পরিষ্কার করে
- শরীর ঠান্ডা থাকলে ঘামজনিত ত্বকের সমস্যা কমে যায়
- ঠান্ডা লেবু পানি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
- লেবুর পেকটিন ফাইবার ক্ষুধা কমায়
লেবু ঠান্ডা পানিতে খাওয়ার ফলে আমরা লেবুর উপকারিতা কে বেড়ে যেতে দেখি। যা সাভাবিক অবস্থায় থাকে, তার কোন পরিবর্তন দেখি না। তবে কিছু সম্ভব্য ক্ষতিকারিতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এর পরিমাণ খুবই কম থাকে।
যে সকল ক্ষতি হতে পারে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার ফলে
আমরা তেমন বেশি বা বড় ধরনের কোন ক্ষতিকর প্রভাব লেবুর ঠান্ডা পানিতে পাই না। তবে সামান্য পরিমাণে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যেতে পারে। আর সেগুলো হলোঃ
- লেবুতে প্রচুর সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যা খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে
- লেবুর অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ধ্বংস করতে পারে
- ঠান্ডা লেবু পানি নিয়মিত খেলে বা রাতে খেলে কারো কারো গলায় ব্যথা বা ঠান্ডা লাগতে পারে
- বেশি খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে ও শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট কমে যেতে পারে
- কিছু মানুষের শরীরে লেবুতে থাকা নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপাদানে অ্যালার্জি বা ত্বকে র্যাশ হতে পারে
- অতিরিক্ত লেবু পানি খেলে হজমের সমস্যা বা পেটে গ্যাস জমে ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে
তবে এই সম্ভব্য সমস্যাগুলো সবার ক্ষেত্রে হয় না। যদি শারেরিক বাবে সুস্থ্য মানুষ লেবুর ঠান্ডা পানি পান করে, তাহলে তার ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকারিতা খুবই কম হয়।
