জিলহজ্জ মাস হলো ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে রয়েছে হজ্ব পালন, কুরবানির আদায় করা এবং প্রথম দশদিনের বিশেষ ফজিলত রয়েছে অনেক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে অন্যান্য দিনের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয়।” (বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের আমল
১. তাওবা ও ইস্তেগফার করা:
আমরা জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০ দিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাব এবং আন্তরিকভাবে পাপমুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করব। এই সময়ে তাওবা করলে আল্লাহ তা’আলা দ্রুত তাওবা কবুল করেন।
২. রোজা রাখা:
জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আর বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ /আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“আরাফার রোজা এক বছরের অতীত এবং ভবিষ্যতের গুনাহ মোচন করে।” (মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)
৩. তাকবির, তাহমিদ, তাসবিহ ও তাহলিল পাঠ করা:
জিলহজের দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। বিশেষত কুরান ও হাদিসে এই দোয়াগুলো পড়তে বলা হয়েছে:
- তাসবিহ: সুবহানাল্লাহ
- তাহমিদ: আলহামদুলিল্লাহ
- তাকবির: আল্লাহু আকবার
তাহলিল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
এই দোয়াগুলো বারবার পাঠ করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
৪. নফল নামাজ ও দোয়া:
এই সময়ে বেশি বেশি নিয়ম অনুসারে নফল নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সাথে সাথে অর্থ বুঝে আল্লাহর বাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করা এবং এর সাথে সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। সুধু নফল নামাজ নয় তাহাজ্জুদ নামাজও গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য ।
৫. দান-সদকা করা:
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার অন্যতম পথ হলো দান-সদকা করা। জিলহজ্জ মাসের ৩০ দিন দান-সদকা করলে আমাদের জন্য এটি বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ হয়ে থাকে।
৬. কুরআন তিলাওয়াত:
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সাথে সাথে অর্থ বুঝে আল্লাহর বাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করা।
জিলহজ্জের ১০ম দিন এবং কুরবানির আমল
জিলহজ্জ মাসে কোরবানীর ঈদ হয়। তাই এই পবিত্র ঈদউল আজহা উপলক্ষে বিশেষ কিছু আমল ও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো।
১. কুরবানি করা:
জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত সামর্থ্য অনুযায়ী এবং নিয়েম অনুসারে পশু কুরবানি করা সুন্নতে মুআক্কাদা।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা তোমাদের রবের জন্য নামাজ আদায় কর এবং নিয়ম অনুসারে কুরবানি কর।” (সূরা কাওসার, আয়াত: ২)
২. কুরবানির নিয়ম ও গুরুত্ব:
- কুরবানির পশু হতে হবে নির্দোষ ও স্বাস্থ্যবান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন নির্দোষ ও স্বাস্থ্যবান কোরবানির পশু না হলে তিনি কুরবানী কবুল করবেন না।
- কুরবানির পর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা। ১ ভাগ নিজেরা খাওয়া, ১ ভাগ আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ, এবং আর ১ ভাগ গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া ইসলামিক মতে এইভাবে ৩ ভাগ করা উচিত।
৯ জিলহজ্জ /আরাফার দিন
১. বিশেষ ইবাদত:
এই দিন এমন একটা দিন যেই দিনে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে কারন এটি দোয়া কবুলের অন্যতম দিন।
২. রোজা রাখা:
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন,
“আরাফার দিনের যিনি রোজা রাখেন তাহার অতীত এক বছর এবং ভবিষ্যৎ এক বছরের গুনাহ মুছে/মাফ করে দেয়।” (মুসলিম)
হজ্ব পালনকারীদের জন্য বিশেষ আমল
যারা হজ্বে গেছেন, তাদের জন্য আরাফার দিনের আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা এদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইবাদতে মশগুল থাকবেন। এইদিনে আল্লাহ তাআলা সব দোয়া কবুল করে নেন।
সতর্কতা:
- প্রধানত এই সময়ে গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অহংকার, সুদ- ঘুশ দেওয়া নেওয়া বা লোক দেখানোর মতো কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
- কুরবানি বা দানের ক্ষেত্রে গরীব-দুঃখীদের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে না নিশ্চিত করলে আমনার আমল কবুল হবেনা
উপসংহার:
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ সময় হলো জিলহজ্জ মাস, এই মাসে ইবাদত ও নেক আমলের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়। আমাদের উচিত এই সময়টিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা যাতে আল্লাহ পাক আমাদের সব গুনা মাফ করে দেন।