আজকের বিষয়: ইফতার,ইফতারের সময় করণীয় কাজ, ইফতারের ফজিলত ও ইফতারের সুন্নাত এবং ইফতারের দোয়া সমুহ। বাংলা ভোরের সাথে থাকতে বাংলা ভোরকে ফলো করুন।
ইফতার:রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস।সহমর্মিতা ও সাম্যের মাস রমজান।রমজানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হলো ইফতার।ইফতার শব্দটি এসেছে আরবী “ফাতর” শব্দ থেকে; যার অর্থ ভঙ্গ করা,রোজা ত্যাগ করা,ছিঁড়ে ফেলা ।ইফতার অর্থ সূর্যাস্তের পর রোজা ছাড়ার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা।
অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সেহরীর সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে সংযম পালন করা হয় ,তার সমাপ্তি নির্দেশ করে ইফতারের মাধ্যমে।ইফতার সাধারণত হালকা খাবার যেমন: খেজুর,পানি দিয়ে শুরু করা হয়।যা আত্মত্যাগ, ধৈর্য ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।ইফতার মুসলিমদের সারাদিন রোজা রাখার পর সতেজ করে তোলে।
তবে সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে যদি কেউ ভুল বশত ইফতার করে ফেলে , তাকে কাযা করতে হবে। ইফতার সময় হওয়ার সাথে সাথে করা মুস্তাহাব ।দেরি করা মাকরূহ।তবে সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে
ইফতারের সময় কি কি করনীয়:
ইফতার অর্থ উপবাস ভঙ্গ করা।সেহরীর পর থেকে সারাদিন সাওম পালনের পর রোযাদার সূর্যাস্তের পর পানাহারের মাধ্যমে যে উপবাস ভঙ্গ করে,মূলত তাকেই ইফতার বলা হয়।যে পানীয় বা খাবার দ্বারা সাওম ভঙ্গ করে,তাকে ইফতারি বলে।ইফতারের সময় যা যা করণীয়:
১.ইফতারের পূর্বে আল্লাহর নিকট দোয়া করা : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন “রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় দোয়া কবুলের একটি উত্তম সুযোগ “(ইবনে মাজাহ)।
তাই ইফতারির সময় হওয়ার আগে ইফতারি নিয়ে বসে তওবা করা-ইস্তেগফার পড়া, জিকির করা,তাসবিহ তাহলিল ও বেশি বেশি দোয়া দরুদ পড়া উচিত । বিশেষ করে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।ইফতারের পূর্বে দুয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।কারন এই সময়ের দোয়া আল্লাহ্ কবুল করে।
২. সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা: জলদি জলদি ইফতার করা মানে হলো সময় হয়ে গেলে ইফতারের বিলম্ব না করা। যেহেতু ইহুদি ও খ্রিস্টানরা রোজা রেখে দেরি করে ইফতার করে ,তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাদেরকে তাদের বিপরীত করতে আদেশ দিয়েছেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দ্রুত ইফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, তাতে আমাদের মঙ্গল আছে। তিনি বলেন “লোকেরা ততক্ষণ মঙ্গলে থাকবে,যতক্ষণ তারা সূর্য ডোবার পর নামাজের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করবে’। ( বুখারী ১৯৫৭,মুসলিম ১০৯৮)।
৩. ইফতার গ্রহণের দোয়া পড়া:রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইফতার গ্রহণের সময় এই দোয়া পড়তেন_
" আল্লা-হুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা ও আফত্বরতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার র-হিমীন্"
অর্থ:”হে আল্লাহ!আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার প্রদত্ত রিজিকের উপর ভরসা রাখি।হে দয়ালুদের চেয়ে বেশি দয়াবান(আল্লাহ)!আমি আপনার রহমতে ইফতার করেছি।”
ইফতারের সময় এই দোয়া পড়া সুন্নাত।
ইফতারের পরের দোয়া
যাহাবায যামাউ, ওয়াব তাল্লাতিল উরুক্বু ও ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ্।
হাদিসে এই দোয়া পড়ার কথা রয়েছে। এই দুয়ার অর্থ হলোঃ তৃষ্ণা দূর হয়ে গেল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্, সওয়াব সাব্যস্ত হল” [সহিহ আবু দাউদ] এর সাথে আরো কয়েকটি দোয়ার কথা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এই দুটো দুয়া।
৪.সঠিক সময়ে ইফতার করা: ইফতারের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতার করা উচিত। তাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ সময় সাংসারিক কাজ বা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।
৫. খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার: খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা উত্তম ও মুস্তাহাব। তবে খেজুর না পেলে সাদা পানি, শরবত বা দুধ দিয়ে ইফতার শুরু করা যাবে। হযরত সালমান ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী(সাঃ) বলেছেন,”তোমাদের কেউ ইফতার করলে খেজুর দিয়ে যেন শুরু করে।কেননা খেজুর বরকতপূর্ণ।আর খেজুর যদি না পায় তবে যেন পানি দিয়ে শুরু করে।কারণ পানি পবিত্রতার উৎস।”(আহমদ ও তিরমিযী)।
৬. ইফতারের সময় হালকা খাবার খাওয়া:ইফতারের সময় ভারী এড়িয়ে চলা উত্তম। কারণ, ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মাগরিব নামাজ আদায় ও ইবাদত করতে সমস্যা হয়।তাই মাগরিব নামাজ জামাতে আদায় করে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়া উচিত।
৭.রোজাদারকে ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক সওয়াবের কাজ।এর প্রতিদিন বিশাল।
হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি রমযান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে,ঐ ইফতার করানোর ফলে তার গুনাহ মাফ হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং ঐ রোজাদারের সওয়াব না কমিয়ে সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় জমা হবে।”(শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি)
ইফতারের ফযীলত:
রমজান রহমত বরকতের মাস। এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার পর ইফতারের রয়েছে বিশেষ কিছু ফজিলত, যা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তা পালন করলে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করা যায়। কিছু উল্লেখযোগ্য ফজিলত হলো:
১.রোজাদারের দোয়া কবুল হওয়া: হাদিসে আছে, “রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এত মূল্যবান যে রোজাদার ব্যক্তি ইফতারির সময় দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন”।
২. আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: ইফতার করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বড় মাধ্যম ।যে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইফতার করেন, আল্লাহ তার উপর খুশি হন এবং তাকে পুরস্কৃত করেন
৩. দুটি খুশির মুহূর্ত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি একটি ইফতারের সময় অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়’।(মুসলিম)
৪. পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি: ইফতারে একসঙ্গে বসে খাওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ,ঐক্য,সাম্য ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
ইফতারের কি কি সুন্নত:
১. অনতিবিলম্বে ইফতার করা। অর্থাৎ মাগরিবের আযান শোনার সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নত।
২. খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত।
৩. ইফতারের আগে দোয়া করা,তাজবিহ- তাহলিল পাঠ করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
৪. ইফতার করার সময় ইফতারের দোয়া পড়া সুন্নত।
৫. পরিমিত আহার করা,ইফতার অপচয় না করা।
৬. ইফতার শেষে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের উচিত নবীজি (সাঃ) এর শেখানো ইফতারের রীতিগুলো অনুসরণ করা, হাদিসের উপর আমল করা এবং ইফতারের আগে তাওবা ইস্তেগফার করা। ইফতার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দোয়া করা সকলের উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নত সম্মত ইফতার করা ও করানো তৌফিক দান করুন ।আমীন….
ইসলামিক সকল খবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে ফলো করে রাখুন। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ।