কালোজিরার অপার স্বাস্থ্যগুণ: রোগ প্রতিরোধে প্রাচীন ঔষধি উপাদানের নতুন দিগন্ত। তাই আজ বাংলা ভোর অনলাইন পত্রিকা থেকে আমরা এই কালোজিরার উপকরিতা ও ক্ষতিসমূহ জানিয়ে দিচ্ছি।
কালোজিরা, যাকে Nigella Sativa বা কালো জিরা নামে পরিচিত, হাজার বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী মসলা এবং ঔষধি গাছের বীজ।
এটি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে প্রচলিত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময়।” বিজ্ঞানও এই দাবি সমর্থন করে অনেক গবেষণায়। তবে এর যথাযথ ব্যবহার এবং সঠিক জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরাতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই এই তালিকায় আমরা কালোজিরার পুষ্টিকনা সমন্ধে জেনে নেই।
কালোজিরার প্রধান উপাদানসমূহ:
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ফ্যাট
- আঁশ
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন ই
কালো জিরার প্রতি ১০০ গ্রাম কালোজিরার মধ্যে প্রায়:
•এনার্জি: ৩৪৪ ক্যালোরি
•ফ্যাট: ১৫ গ্রাম
•কার্বোহাইড্রেট: ৫২ গ্রাম
•প্রোটিন: ১৬ গ্রাম
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা একটি প্রাকৃতিক ভালোবাসা, যা শরিরের জন্য সরাসরি স্রষ্টার একটি বিশেষ উপহার ও বটে। তাই এই কালোজিরার উপাদান ও খাওয়ার উপকরিতা সমন্ধে জানুন। কালোজিরা ঔষধি গুণাবলির জন্য বিখ্যাত। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি •কালোজিরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। এটি সর্দি-কাশি, ভাইরাল ইনফেকশন এবং ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২. শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে •কালোজিরা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
৩. পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী •কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
•পেটের ফাঁপা এবং অম্বল কমায়।
•গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৪. হৃদযন্ত্রের যত্নে সহায়ক •কালোজিরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
•রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধী •কালোজিরায় থাকা থাইমোকুইনোন উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমায় এবং শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৬. চুল ও ত্বকের যত্ন •কালোজিরার তেল চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
•ত্বকের ব্রণ, ইনফেকশন এবং দাগ দূর করতে সহায়ক।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ •রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
•ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
৮. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি •কালোজিরা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
৯. শরীরের ব্যথা উপশম •কালোজিরার তেল আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
•এটি মাংসপেশীর ব্যথা এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে সহায়ক।
১০. নারীস্বাস্থ্যে ভূমিকা •পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমায়।
•PCOS এবং হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া এবং ব্যবহার করা যায়। সঠিক নিয়ম মেনে খেলে এর কার্যকারিতা বাড়ে। তাই আমরা এই পর্যায়ে আপনাদের জন্য কালোজিরা খাওয়ার সঠিক কিছু নিয়ম বলে দেই।
১. কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া
•প্রতিদিন সকালে এক চা-চামচ কালোজিরা খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়া উপকারী।
২. পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া
•রাতে কালোজিরা পানিতে ভিজিয়ে সকালে সেই পানি খেলে হজম ভালো হয়।
৩. তেল হিসেবে ব্যবহার
•কালোজিরার তেল চুলে, ত্বকে এবং ব্যথার স্থানে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
•এটি খালি পেটে ১ চা-চামচ করে খাওয়া যায়।
৪. মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া
•কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫. খাবারে মসলা হিসেবে
•তরকারি, ভাত বা রুটির সঙ্গে মসলা হিসেবে কালোজিরা ব্যবহার করলে স্বাদ এবং পুষ্টি বাড়ে।
৬. চা বানিয়ে খাওয়া
•কালোজিরা গুঁড়ো করে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি কমে।
কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
কালোজিরা খাওয়ার যেমন উপকরিতা আছে, ঠিক তেমন এর বেশি খাওয়ায় ও কিছু পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তাই এখানে কিছুটা ক্ষতিকর বিষয়েও তুলে ধরা হলো।
১. গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকি
•কালোজিরা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. লো ব্লাড প্রেশার
•কালোজিরা রক্তচাপ কমায়। যাদের রক্তচাপ খুব কম, তাদের এটি সাবধানে খাওয়া উচিত।
৩. অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে সমস্যাগ্রস্ত পেট
•অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
৪. রক্ত পাতলা করার ঝুঁকি
•কালোজিরা রক্ত পাতলা করে। যারা ব্লাড থিনার ওষুধ সেবন করছেন, তাদের এটি এড়ানো উচিত।
৫. অ্যালার্জি
•যাদের কালোজিরার প্রতি সংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের ত্বকে অ্যালার্জি বা চুলকানি হতে পারে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
সকল জিনিসের যেমন বিধী নিষেধ থাকে। তেমন ই কালোজিরার ও রয়েছে। বেশি খেলেও যেমন সমস্যা, ঠিক না খেলেও থাকে অনেক রকমের সমস্যা দূর হয়। সব দিক ঠিক রেখে নিয়ম মেনে খাওয়া দরকার।
সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিত কালোজিরা খেলে এর পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায়।
১. দৈনিক ডোজ
•প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ১-৩ গ্রাম বা ১ চা-চামচ।
•শিশুদের জন্য: আধা চা-চামচ।
২. সময়
•খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
•খাবারের পরে পানির সঙ্গে খেলে হজমশক্তি বাড়ে।
৩. গুঁড়ো করে খাওয়া
•কালোজিরা গুঁড়ো করে রুটি, দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
কালোজিরার ব্যবহার
১. সৌন্দর্যচর্চায়
•ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কালোজিরার পেস্ট ব্যবহার করা হয়।
•কালোজিরার তেল চুলে ম্যাসাজ করলে চুল মসৃণ এবং স্বাস্থ্যবান হয়।
২. রোগ নিরাময়ে
•কালোজিরার তেল গাঁটে বা পিঠে লাগালে ব্যথা কমে।
•সর্দি-কাশি হলে কালোজিরা দিয়ে চা তৈরি করে পান করা যায়।
৩. হজমে সহায়ক
•কালোজিরা ও দইয়ের মিশ্রণ পেটের সমস্যা কমায়।
৪. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
•গরম পানিতে কালোজিরা ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কালোজিরা সংরক্ষণ পদ্ধতি
১. শুকনো জায়গায় রাখা
•কালোজিরা শুকনো এবং ঠাণ্ডা জায়গায় রাখুন।
•সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন।
২. বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ
•পাত্রে বায়ু ঢুকলে কালোজিরার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
উপসংহার
স্বাস্থ বিষয়ে আরো অনেক অনেক তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের নটিফেকেশন চালু করে রাখতে পারেন। আর নিচের হোয়াটসঅ্যাপে ফলো করে রাখতে পারেন।