হেপাটাইটিস বি লিভারের ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ, যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস (HBV) দ্বারা সংক্রমিত হয়।
এটি মূলত লিভারের প্রদাহ এবং ক্ষতি করে।এই সংক্রমণ তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি জটিল রোগ যেমন: লিভারের সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলা হয় এবং বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব বেশ লক্ষণীয়।
বিশ্বে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ (প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১জন) সংক্রমিত হয়েছেন এই রোগটিতে এবং প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন পর্যন্ত মানুষ হেপাটাইটিস আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যদিও এটি একটি প্রতিরোধ যোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য অসুখ।
হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ
হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি একটি ছোঁয়াচে রোগ। তবে সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যমে একটি ছড়ায় না। হেপাটাইটিস বি সাধারণত সংক্রমিত হয় বা ছড়ায়:
- রক্তের মাধ্যমে: হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও দেহ রসের মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন, রক্তদানের সময়, ট্যাটু করার সময় ইত্যাদি।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সুঁই, ব্লেড টুথব্রাশ এবং অন্যান্য দাঁড়ালো জিনিসের ব্যবহারের মাধ্যমে।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় সংক্রমিত মায়ের থেকে তার সন্তানের এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
তবে এটি কোলাকুলি, হাত মেলানো বা একসাথে খাওয়ার সময় সংক্রমিত হয় না।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ গুলো কি কি?
অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। যখন লক্ষণ দেখা দেয় ,তখন যা হতে পারে:
১:জন্ডিস (চামড়া ও চোখের পানি হলুদ হয়ে যাওয়া)
২:বমি বমি ভাব
৩:পেটে ব্যথা
৪:গাঢ় রঙের প্রস্রাব
৫:দুর্বলতা ও ক্লান্তি
৬:জ্বর
হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
দুঃখের বিষয় হল যে হেপাটাইটিস বি একবার শরীরে প্রবেশ করলে, তা সম্পূর্ণভাবে নেগেটিভ করা বা নির্মূল করা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। অনেক সময় চিকিৎসার মাধ্যমে ভাইরাসের পরিমাণ কমানো এবং এর প্রভাব কম পড়া সম্ভব হয়।
কেন হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করা কঠিন?
১. ভাইরাসের প্রকৃতি: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যকৃতের কোষের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সেখানে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে।
২. দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ: অনেক ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে পরিণত হয়।
৩. ঔষধের সীমাবদ্ধতা :বর্তমানে যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভাইরাসকে সম্পূর্নভাবে নির্মূল করতে পারে না।
তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করলে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়:
- চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন: আপনার হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন। এটি ভাইরাসের পরিমাণ কমাতে এবং যকৃতের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করিয়ে রাখুন।
- স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন: সুষম খাদ্য গ্রহণ ,নিয়মিত ব্যায়াম এবং মধ্যপান এড়িয়ে চলা আপনার যকৃতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
- পরিচ্ছন্ন অভ্যাস বজায় রাখা: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং মুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার নিশ্চিত করা
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের উপায়:
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের জন্য যা করণীয়:
- হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন: বর্তমানে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
- নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক এড়িয়ে চলুন।
- ব্যবহৃত সুঁই বা অন্যান্য দাঁড়ালো জিনিস বারবার ব্যবহার না করা।
মনে রাখবেন হেপাটাইটিস বি একটি গুরুতর রোগ হতে পারে। হেপাটাইটিস বি গুরুতর আকার ধারণ করলে বা লিভারকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করলে রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে। যারা এখনো এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন নি, তারা দ্রুত হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিতে পারেন। কারণ,প্রতিরোধই হলো সর্বোত্তম চিকিৎসা।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল তথ্য ও খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আমাদের সকল খবর পেতে এই সাইটের নটিফেকেশন চালু করে রাখুন, এবং আমাদের নিচের হোয়াটসঅ্যাপে ফলো করে রাখতে পারেন।