ম্যালেরিয়া: ম্যালেরিয়া (ইংরেজি: Malaria) হলো একটি মশা বাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ,যা মেরুদন্ডী প্রাণীদের প্রভাবিত করে।
এটি কেবল সংক্রমিত অ্যানোফেলিস মশার কামড়ে হয়। এপর্যন্ত ষাটের অধিক প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও এর মধ্যে চারটি প্রজাতি মানুষের ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। পল্গাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম ,ম্যালেরি ও ওভাল এর যে কোন একটি জীবাণু বহনকারী অ্যানোফেলিস মশার দংশনে ম্যালেরিয়া হতে পারে। সংক্রমিত মশা কামড়ানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ হতে শুরু করে।
ম্যালেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করার টর্টি(Torti) ১৭৫১ সালে। ইতালিয় শব্দ Mal (অর্থ-দূষিত) ও aria(অর্থ-বায়ু) হতে ম্যালেরিয়া শব্দটি এসেছে।
প্রত্যেক বছর প্রায় ৫১.৫ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং দশ থেকে ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের শিশু।এই রোগটি ক্রান্তিয় অঞ্চল,উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকাসহ বিষুবরেখা ঘিরে ব্যাপক বিস্তৃত।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
যে সকল লক্ষনের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন যে কেউ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য লক্ষনগুলো হলো।
১. জ্বর: বারবার আসা ও যাওয়া, সাধারণত রাতের বেলা।
২. শরীর কাপুনি:শীতের কম্পন সহ জ্বর ।
৩. অত্যধিক ঘাম:জ্বরের পরে ঘাম হওয়া।
৪. তীব্র মাথাব্যথা।
৫. পেশি ও গিঁটের ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
৮. কিছু ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
৯. কিছুক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস, কিডনি বা লিভার ব্যর্থতা হতে পারে।
ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে বা লক্ষণ গুলো দেখা দিল অবশ্যই আগে পরীক্ষা করতে হবে। যদি ম্যালেরিয়া ধরা না পড়ে, তাহলে পরবর্তী তিন দিন পরীক্ষাটি করতে হবে ।যদি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার
বিশেষ কিছু উপায়ে আমরা এই ম্যালেরিয়া থেকে বেচেঁ থাকতে পারি, বা ম্যালেরিয়্যার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেখান থেকে মুক্তি পেতে পারি। তার মধ্যে অন্যতম কিছু প্রতিকার হলো
১.ঔষধ সেবন: ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ঔষধ রয়েছে। কিছু সাধারণ ঔষধ হলোঃ
•ক্লোরোকুইন (chloroquine): সাধারন ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
•আর্টোমিসিনিন-ভিত্তিক সংমিশ্রণ থেরাপি(ACT): এটি ম্যালেরিয়ার গুরুতর পর্যায়ে কার্যকর।
•প্রাইমাকুইন(Primaquine): লিভারের সুপ্ত ম্যালেরিয়া নিরাময়ের জন্য।
•মেফ্লোকুইন(Mefloquine)
•ডক্সিসাইক্লিন(doxycycline): প্রতিরোধমূলক ঔষধ হিসেবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না।
২.পরামর্শ ও পরীক্ষা:গুরুতর রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করে রক্ত পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
৩.প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা।
মশা প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার।
ঘরের আশেপাশে পানি জমতে দিবেন না।
মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আছে এমন এলাকায় গেলে প্রতিরোধমূলক ঔষধ গ্রহণ করুন।