দাদ কেন হয়, তাই আমাদের ভালো করে জেনে নিতে হবে। তার পরেই আমরা সেই রোগের চিকিৎসা করতে পারবো। সেই সাথে দাদের কিন্তু বিশেষ কিছু ধরন রয়েছে, সেই ধরনগুলো সমন্ধে জেনে নিতে হবে।
আর ধারাবাগিক ভাবে আমরা বিশেষ সকল প্রকারের দাদের চিকিৎসা বা দাদ ভালো করার উপায় সমন্ধে জেনে নিবো।
দাদ কেন হয়
দাদ বা দাউদ হলো বিশেষ এক ধরনের ত্বকের সংক্রমণ, যা ডার্মাটোফাইট নামক ভাইরাসের কারণে হয়। এই ফাংগাস আর্দ্র, উষ্ণ এবং ঘাম যুক্ত দেহে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই সাধারণত, অপরিষ্কার ত্বক, অপরিষ্কার পোশাক পরিধান, ব্যক্তিগত দেহের পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে দাদ বা দাউদ হতে পারে।
দাদ দেহে কোন অংশে একবার জন্ম নিতে পারলে পরে আবার সেটি দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নয় শুধু এর সাথে আবার এটি একজনের থেকে অন্য জনের দেহেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
তাই দেহের দাদ রোগের সংক্রমনের অংশের কোন কাপড় বা পানি, ঘাম ইত্যাদি অন্য জনের দেহে সংস্পর্শে এলে সেখানেও এই ভাইরাসের সংক্রমন হতে পারে।
দাদ কত প্রকার ও কি কি
দাদ যেহেতু একটা বিশেষ ভাইরাস সেহেতু তাই এর মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে। তার সাথে আবার চিকিৎসার জন্যেও এই ভাগ গুলো সমন্ধে যেনে নিতে হয়।
দাদকে সাধারণত সংক্রমণের স্থান অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়—
- টিনিয়া কর্পোরিস (Tinea Corporis): দেহের চামড়ায় যে দাদ দেখা দেয়।
- টিনিয়া ক্যাপিটিস (Tinea Capitis): মাথার ত্বকে দাদ হয়, যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- টিনিয়া ক্রুরিস (Tinea Cruris): উরুর ভাঁজ বা কুঁচকিতে যে দাদ হয়, একে ‘জকের ইচ’ (Jock itch) বলা হয়।
- টিনিয়া পেডিস (Tinea Pedis): পায়ের ত্বকে দাদ হয়, যা সাধারণত ‘অ্যাথলেটস ফুট’ নামে পরিচিত।
- টিনিয়া আনগুইয়াম (Tinea Unguium): নখে দাদ হয়, একে অনাইকোমাইকোসিস (Onychomycosis) বলা হয়।
দাদ বা দাউদ কিভাবে ভালো হয়
দাদ ভালো করার জন্য বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে। তাই আমাদের সেগুলো সমন্ধে জেনে নেওয়া ভালো। প্রথমত ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা আর দ্বিতিয় হচ্ছে ওষুধের চিকিৎসা।
দাদ (দাউদ) ভালো করার ঘরোয়া উপায়
দাদ সাধারনত ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব। তবে দাদের ফাঙ্গাস রক্তের সাথে মিশে থাকে। তাই দেহের উপরিভাগ থেকে দাদের সংক্রমন ভালো হতে পারে, কিন্তু রক্তের ভেতরের ফাঙ্গাস থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে রক্ত পরিষ্কার করার ওষুধ শেবন করা উচিৎ।
সেই সাথে আর যে সকল কাজের মাধ্যমে আপনি দাদ থেকে মুক্তি পেতে পারেনঃ
রসুন:
- রসুনে থাকা অ্যালিসিন ফাংগাস দূর করতে কার্যকর। রসুনের আরো হাজার গুন তো আছেই।
- পেস্ট তৈরি করে দাদের জায়গায় ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ:
- হলুদের কারকিউমিন অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তবে এই হলুদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
- হলুদের রস বের করে আক্রান্ত স্থানে লাগান, শুকানোর পর ধুয়ে ফেলুন।
এলোভেরা:
- এলোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে এই অ্যালোভেরা সহজে পাওয়া না গেলে আপনি অন্যান্য উপায়ে দাদ ভালো করতে পারেন।
- তাজা এলোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন।
নারকেল তেল:
- এতে থাকা ক্যাপ্রিক অ্যাসিড এবং লরিক অ্যাসিড ফাংগাস ধ্বংস করে। এটা অতি সহজেই ক্ষত থেকে জীবানু থেকে মুক্ত হতে পারে।
- প্রতিদিন ২-৩ বার নারকেল তেল লাগান।
নিম পাতা:
- নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল গুণ রয়েছে। যা আপনার দেহের ফাঙ্গাস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে আক্রান্ত অংশ ধুয়ে ফেলুন।
তবে ঘরোয়া চিকিৎসায় কিছু সতর্কতা রয়েছে
- সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাই খোঁটাখুঁটি করবেন না।
- পরিষ্কার ও শুকনো পোশাক পরিধান করুন।
- দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- সাবান ব্যবহার করার বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা।
- অতিরিক্ত পরিমানে এই উপাদানগুলো ব্যবহার এড়িয়ে চসুন।
দাদ (দাউদ) ভালো করার ওষুধ
ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করতে গেলে অনেক ঝামেলা করতে হয়। সেজন্য সবাই প্রায় ডাক্তারি চিকিৎসা গ্রহন করে থাকে। তাই বিভিন্ন প্রকারের দাদের ওষুধ ও দাদের মলম বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকে।
দাদের জন্য ভালো কিছু ট্যবলেট, মলম ও ক্রিম দেওয়া হলোঃ
দাদ এর ঔষধ এর নাম
দাদ এর ফাঙ্গাশ দেহ থেকে নিরাময় করতে বিশেষ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম ওষুধগুলো হলেঃ
মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট / ক্যাপসুল / সিরাপ
- ফ্লুকোনাজল (Fluconazole) ক্যাপসুল/সিরাপ – দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়।
- ইট্রাকোনাজল (Itraconazole) ট্যাবলেট/ক্যাপসুল – শরীরের গভীর সংক্রমণে কার্যকর।
- টেরবিনাফাইন (Terbinafine) ট্যাবলেট – বেশি তীব্র সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়।
দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম
- ক্লোট্রিমাজল (Clotrimazole) ক্রিম – বাজারে “কেনেস্টেন” নামে পরিচিত।
- মিকোনাজল (Miconazole) ক্রিম – সংক্রমিত ত্বকে ব্যবহার করা হয়।
- টেরবিনাফাইন (Terbinafine) ক্রিম – এটি ত্বকের গভীরে ছত্রাক ধ্বংস করে।
- কেটোকোনাজল (Ketoconazole) ক্রিম – তীব্র ছত্রাকজনিত সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়।
- ইকোনাজল (Econazole) ক্রিম – সংক্রমণ দূর করতে সহায়ক।
দাদ ভালো করার লোশন
দাদ যদি শরিরে বেশি প্রশরিত হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি ভালো করার জন্য বিশেষ কিছু লোশন ব্যবহার করা হয়। তাই এই লোশনগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
- পোভিডোন আয়োডিন (Povidone Iodine) লোশন – ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
- সেলিসাইলিক এসিড (Salicylic Acid) লোশন – মৃত ত্বক তুলে ফেলে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
ওষুধ ব্যবহারের বিশেষ কিছু সতর্কতা
যেহেতু এই ওষুধগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রবনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে। সেজন্য এই বিষয়ে আমাদের কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ
- ওষুধের ডোজ এবং ব্যবহারের সময়কাল ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করুন।
- দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা বাড়তে থাকা দাদের ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখান।
- নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ কিছু ওষুধ লিভার বা কিডনির সমস্যার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আর দাদ বা চুলকানি সমন্ধে আগে আপনি যথার্থ সম্ভব হতে হবে। তাই আগে জানুন পরে যথার্থ চিকিৎসা করা উচিৎ।
সাস্থ বিষয়ক সকল তথ্য পেতে আমাদের নটিফেকেশন চালু করে রাখতে পারেন আর ,সেই সাথে নিচের হোয়াটসঅ্যাপেও ফলো করে রাখতে পারেন।