আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। তেমনি একটি মারাত্মক রোগের নাম টাইফয়েড। টাইফয়েড একটি পানিবাহিত রোগ। টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি(Salmonella typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে।
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে প্রধানত এই জীবাণু ছড়ায়। রক্ত ও অন্ত্রণালিতে স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেলে তখনই রোগী টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সাধারণত জীবাণু প্রবেশের ৬ থেকে ৩০ দিন পরে এই জ্বরের লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
টাইফয়েড জ্বর এ আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করে। জ্বর এ রোগের প্রধান লক্ষণ যা প্রথম চার পাঁচ দিন জ্বর বৃদ্ধি পায় ।জ্বর কখনো বাড়ে ,কখনো কমে ।তবে কোনো সময় সম্পন্ন ছেড়ে যায় না।এর সাধারণ লক্ষণ সমূহ হলো:
- উচ্চজ্বর(জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০৩°-১০৪°ফারেনহাইট হয়)
- শারীরিক দুর্বলতা
- ক্ষুধামন্দা
- পেটের সমস্যা (ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে)।
- প্রচন্ড পেটে ব্যথা বিশেষ করে পেটের ডান পাশে।
- মাথাব্যথা ও সর্দি কাশি।
- পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙ্গের দানা বা ত্বকে র্্যাশ দেখা দিতে পারে ।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
টাইফয়েড এর প্রতিকার ও চিকিৎসা
প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর টাইফয়েড জ্বর হলে প্রধানত এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে ডাক্তারগণ চিকিৎসা করে থাকেন। নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক শুরুর পর জ্বর কমতে পাঁচ দিনের বেশি লেগে যেতে পারে।
চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে অধিক পরিমাণে স্যালাইন ও পানি পান করতে হবে। কারণ দীর্ঘস্থায়ী জ্বর ও ডায়রিয়ার কারনে শরীরের পানি সল্পতা দেখা দেয়। পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার যেমন, খিচুড়ি, স্যুপ ,ফলের রস ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করতে হবে। শরীরে ক্লান্তি কাটাতে টাইফয়েড রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর বেশি থাকলে পুরো শরীর ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পর হাত পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধের উপায়
১. টিকা: চিকিৎসকেরপরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েড জ্বরের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণের ফুটানো এবং পরিশোধিত পানি ব্যবহার করুন।
৩. শাক-সবজি, ফলমূল সবসময় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে ।খাবার সঠিকভাবে রান্না করতে হবে।
৪. খাবার গ্রহণ, প্রস্তুত ও পরিবেশনের পূর্বে ভালোভাবে হাত ধৌত করতে হবে। বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকুন। তার পার্শ্বস্হ্য দোকানের খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. পরিষ্কার পরিছন্নতাই টাইফয়েড থেকে বাঁচার মূল মন্ত্র। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম
বিভিন্ন কোম্পানির বা পার্মার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে টাইফয়েডের জন্য। সেই সাথে টাইফয়েডের বিভিন্ন ধরনের উপরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করা হতে পারে। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে টাইফয়েডের ওষুধ শেবন করুন।
টাইফয়েটের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি ওষুধ, যা শিশুদের জন্য একটি ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য একটি নির্ধারন করা। ওষুধ দুটি হলোঃ
- Ciprofloxacin (সিপ্রোফ্লক্সাসিন): প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের জন্য।
- Azithromycin (অ্যাজিথ্রোমাইসিন): যারা সিপ্রোফ্লক্সাসিন সেবন করতে পারেন না বা শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে
এই বিষয়ে জেনে নেওয়া খুবই জরুরি একটা বিষয়। তবে টাইফয়েড কোন ছোয়াচে রোগ বা জ্বর নয়। কিন্তু খাবার, পোষাক বা ইত্যাদি মাধ্যমে এই বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবানু ছড়িয়ে অন্য দেহে আক্রোমন করতে পরে, সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক।
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত
সাধারনত ঠান্ডা জাতিয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ওষুধ শেবন করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হয়। ভাত, ডাল, খিচুরি বা এই জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো, এবং বিভিন্ন ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে পারেন।
টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়
ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করে এই রোগের জন্য নির্ভরশীল হওয়া ঠিক নয়। এই ধরনের রোগের জন্য ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ সঠিক মাত্রায় শেবন করা আবশ্যক। এবং বিশ্রাম ও জত্নের মাধ্যমে অতি দ্রুত শুস্থ হওয়া সম্ভব। শ্রষ্টাকে শুস্থতার জন্য বিশেষ কামনা জানানো।
আর সম্ভব হলে, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, বেশি পানি পান করা ও ফলমুল খাওয়া। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে এবং দেহে পুষ্টি যোগানোর মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি করে।
টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম
বেশি টাইফয়েড জ্বরের আক্রমণের থেকে মুক্তি পেতে ইনজেকশন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তাই এই রোগের ইনজেকশন এর প্রয়োগ বেশ লক্ষ্যনীয়। টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম হলোঃ
Ceftriaxone (সেফট্রিয়াক্সোন) তবে এটি ডাক্তারের পিসক্রেবশন অনুযায়ী ব্যবহার যোগ্য। আর এর বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে পারে।
টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে
টাইফয়েড জ্বর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদী হয়ে স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারে। তাই এটি দেহের উপরে এবং চিকিৎসার উপরে নির্ভরশীল হতে পারে।
তবে স্বাধারনত ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ এর দীর্ঘত্ব বা স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারে। তাই সচেতনতার সাথে ওষুধ শেবন করলে তার আগে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।