কোন কোন কারনে কোমড়ে ব্যাতা হয়, আর সেগুলো থেকে কিভাবে সমাধান পাওয়া যায়। কি খেলে কোমড়ের ব্যাথা ভালো হয়। সেই সাথে, কোন কোন ট্যাবলেট খেলে কোমড়ের ব্যাথা ভালো হবে সেগুলো সমন্ধে জানতে পারেন।
কোমরের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা বয়স, কাজের ধরন এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। সঠিক কারণ জানা এবং প্রতিকারের উপায় গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোমরের ব্যথার প্রধান কারণসমূহ
- পেশির আঘাত বা টান:
ভারী কোনো জিনিস তোলা বা হঠাৎ পেশিতে চাপ পড়লে কোমরের পেশিতে আঘাত বা টান লাগতে পারে। - ডিস্ক সমস্যা:
মেরুদণ্ডের ডিস্ক সরে যাওয়া বা ক্ষয় হয়ে গেলে (হার্নিয়েটেড ডিস্ক) কোমরের ব্যথা হতে পারে। - আর্থ্রাইটিস (গেঁটেবাত):
আর্থ্রাইটিস মেরুদণ্ডের জয়েন্টকে প্রভাবিত করে ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে। - পিঠের হাড়ের সমস্যা:
যেমন স্পন্ডাইলোসিস বা অস্টিওপোরোসিসের কারণে হাড় দুর্বল হয়ে কোমরের ওপর প্রভাব ফেলে। - বদঅভ্যাস:
সঠিক ভঙ্গিতে না বসা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, কিংবা সঠিকভাবে না হাঁটার কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। - আঘাত:
দুর্ঘটনার ফলে কোমরে আঘাত লাগা। - অতিরিক্ত ওজন:
অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। - গর্ভাবস্থা:
নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার সময় ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। - মানসিক চাপ:
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ পেশিকে শক্ত করে ব্যথার কারণ হতে পারে।
কোমরের ব্যথা প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা:সোজা হয়ে বসুন এবং হাঁটুন।ভারী জিনিস তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন, কোমর বাঁকাবেন না।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণ:অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডে চাপ ফেলে, তাই নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম:কোমর ও পিঠের মাংসপেশি শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করুন।প্ল্যাঙ্ক, ব্রিজ পোজ, এবং কোমর স্ট্রেচের মতো ব্যায়াম উপকারী।
৪. সঠিক বিছানা ব্যবহার:খুব নরম বা খুব শক্ত ম্যাট্রেসে ঘুমাবেন না। মাঝারি ধরনের ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন।
৫. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন দুধ, দই, ছোট মাছ, বাদাম, ও সূর্যের আলো।
৬. বিশ্রাম নেওয়া:ব্যথা বেশি হলে ভারী কাজ বন্ধ করে কোমরকে বিশ্রাম দিন।
৭. হিট থেরাপি বা ঠান্ডা প্যাক:পেশি আঘাত বা প্রদাহে ঠান্ডা প্যাক ব্যবহার করুন।পেশি শিথিল করতে হিট প্যাক (গরম পানির ব্যাগ) উপকারী।
৮. মানসিক চাপ কমানো:নিয়মিত মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন থেরাপি করুন।
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
১. সাধারণ ব্যথানাশক:
প্যারাসিটামল (Paracetamol):
হালকা ব্যথার জন্য নিরাপদ এবং সহজলভ্য।
২. নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs):
ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen): ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac): তীব্র ব্যথায় কার্যকর।
৩. মাসল রিল্যাক্সেন্ট (Muscle Relaxant):
টিজানিডিন (Tizanidine): পেশির টান কমাতে।
ব্যাক্লোফেন (Baclofen): পেশি শিথিল করতে।
৪. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট:
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট: হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
ভিটামিন ডি ট্যাবলেট: মেরুদণ্ড ও হাড় মজবুত করে।
৫. টপিকাল ক্রিম বা জেল:
ভোলট্রেন জেল (Voltaren Gel): পেশির ব্যথা কমাতে।
ক্যাপসাইসিন ক্রিম (Capsaicin Cream): শিথিলতা প্রদান করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি:
এই সকল সমস্যার জন্য সবার আগে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। বিশেষ কিছু বিষয়ে লক্ষনীয়, এই লক্ষনগুলো দেখা গেলে আপনার সবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। তার সাথে দুর্বল শরিরে সাধারন কেল্সিয়ামের ট্যাবলেট খেলে জ্বর আসতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
- ব্যথা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।
- ব্যথার সাথে পা অবশ হয়ে যায়।
- রাতে ব্যথা বেড়ে যায় বা ঘুমাতে সমস্যা হয়।
- জ্বর, দুর্বলতা বা ওজন হ্রাসের মতো অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।
কোমরের ব্যথা কমানোর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট
যদি ডাক্তার মনে করেন যে আপনার হাড় দুর্বলতার কারণে ব্যথা হচ্ছে, তাহলে তিনি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট পরামর্শ দিতে পারেন। বাংলাদেশে বেশ কিছু জনপ্রিয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট পাওয়া যায়, যেমন:
- Ostocal-D (ক্যালসিয়াম + ভিটামিন ডি)
- Calcin-C (ক্যালসিয়াম সিট্রেট + ভিটামিন সি)
- Calbo-D (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট + ভিটামিন ডি)
- Shelcal-500 (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট)
- সেই সাথে ভিটামিন বি কম্পলেক্স খেতে পারেন।
কিভাবে খাবেন কোমড় ব্যথার ট্যাবলেট
- সাধারণত খাবারের পরে দিনে ১-২ বার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- ক্যালসিয়াম গ্রহণের সময় ভিটামিন ডি-এর উপস্থিতি জরুরি, কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।
উপসংহার:
কোমরের ব্যথা হালকা হলেও এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। সঠিক জীবনধারা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে জটিল অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন বা থেরাপি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই ধরনের স্বাস্থ বিষয়ক তথ্য পেতে আপনি আমাদের নটিফেকেশন চালু করে রাখতে পারেন। সেই সাথে আবার নিচের হোয়াটসঅ্যাপেও জয়েন করে রাখতে পারেন।