রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু পুরোনো প্লুটোনিয়াম নিষ্পত্তি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছেন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) তিনি এ-সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করেন, যা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তির আইনি অস্তিত্বও শেষ হলো।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে রুশ পার্লামেন্ট চুক্তি বাতিলের অনুমোদন দেয়, এবং পুতিনের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সেটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হলো।
২০০০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল—দুই দেশের অস্ত্রভান্ডারে থাকা অতিরিক্ত ৩৪ টন করে উচ্চমাত্রার প্লুটোনিয়াম নিরাপদভাবে ধ্বংস করা। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, এই বিপুল পরিমাণ প্লুটোনিয়াম দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি সম্ভব হতো। চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল এই উপাদানকে এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা, যাতে তা আর সামরিক কাজে ব্যবহার করা না যায়।
তবে ২০১৬ সাল থেকেই রাশিয়া চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছিল। এবার সেটি পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দিল মস্কো।
রুশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র নাকি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক ‘শত্রুতাপূর্ণ’ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
রাশিয়ার দাবি, চুক্তিতে উল্লেখ ছিল প্লুটোনিয়ামকে মিক্সড অক্সাইড (MOX) ফুয়েলে রূপান্তর করতে হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিকল্প পথ নিচ্ছে—যা ভবিষ্যতে এই উপাদান সামরিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
এছাড়া ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং পশ্চিমা বিশ্বের নীতি রাশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেও অভিযোগ মস্কোর।
চুক্তি বাতিলের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘নিউ স্টার্ট’ নামের সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এমন একটি পদক্ষেপ দুই পরাশক্তির মধ্যে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরুর আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরাপত্তার কাঠামোতে একটি বড় শূন্যতা তৈরি করতে পারে—যা ভবিষ্যতে বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা আরও বাড়াবে।
