গাজায় যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে আনন্দে মেতে উঠেছে অনেকে। রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস, চোখে-মুখে স্বস্তির হাসি — যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষগুলোর মুখে অনেকদিন পর একটু আশার আলো।
তিন দিন ধরে মিশরে গোপনে চলা বৈঠকের পর অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, ইসরায়েল ও হামাস তার দেওয়া ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে রাজি হয়েছে।
ট্রাম্প এক সামাজিক পোস্টে লিখেছেন,
“সব জিম্মি খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে। একই সঙ্গে ইসরায়েল তাদের সেনা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ফিরিয়ে আনবে। এটা হবে স্থায়ী শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ।”
তবে সেই প্রথম ধাপের বিস্তারিত তিনি এখনো জানাননি।
এই সমঝোতা এল এমন সময়, যখন হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ইসরায়েল আক্রমণের দুই বছর দুই দিন পূর্ণ হলো। তখন প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকালেই মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
তবে বাস্তবে এখনো পুরোপুরি থামেনি সংঘর্ষ। স্থানীয় সময় রাতেও গাজার কিছু এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনারা এমন এক সীমারেখায় ফিরে যাবে, যেখানে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ অনুযায়ী, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ জন জিম্মি ছাড়তে হবে এবং পরে মৃত ২৮ জনের দেহ ফেরত দিতে হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল ছাড়বে প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে, যারা যাবজ্জীবন দণ্ডে দণ্ডিত। এছাড়াও গাজা থেকে আটক আরও ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বন্দি মারওয়ান বারঘুতি এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দেবে ইসরায়েল। একই সঙ্গে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকবে গাজায়।
ফিলিস্তিনি সূত্র বলছে, শুরুতে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ ট্রাক ত্রাণ ঢুকবে, পরে সেটা বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধবিরতি তদারকিতে প্রায় ২০০ সেনার একটি বহুজাতিক বাহিনী কাজ করবে, যাতে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনারা থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো সেনা গাজায় মোতায়েন করা হবে না।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হবে, আর ক্লান্ত গাজার মানুষ সত্যিই কি এবার একটু শান্তি পাবে?
