হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ট্রং রুম থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিস্ময়করভাবে একই ভল্টে থাকা সোনা ও হীরা অক্ষত থাকলেও চুরি হয়েছে কেবল অস্ত্র।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ অক্টোবরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর। সেদিন দুপুরে কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে, যা প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে জ্বলে। এতে বিপুল পরিমাণ আমদানি করা পণ্য পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
তবে আগুনের ভয়াবহতা থেকেও রক্ষা পায় কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমটি, যেখানে সোনা, হীরা, মূল্যবান নথি ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষিত ছিল। আগুন নেভানোর পর বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে ভল্টটি সিলগালা করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই প্রকাশ পায় চাঞ্চল্যকর তথ্য—ভল্ট থেকে উধাও সাতটি অস্ত্র।
চুরি হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম-৪ কারবাইন রাইফেল এবং ব্রাজিলের টরাস সেমি-অটোমেটিক পিস্তল। এসব অস্ত্র সাধারণত পুলিশের বিশেষ সোয়াট ইউনিট ব্যবহার করে থাকে।
অগ্নিকাণ্ডের পর ভল্টের নিরাপত্তা দায়িত্বে ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ২৪ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি দল ভল্ট পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়—অস্ত্রের ট্রাঙ্ক ভাঙা এবং ভল্টের লক খোলা। ভেতরে ২১টি অস্ত্র পাওয়া যায়, যার মধ্যে তিনটি পোড়া অবস্থায় ছিল।
পরে ভল্ট মেরামত ও পুনরায় সিল করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফা গণনায় দেখা যায়, তালিকার ২১টি অস্ত্রের মধ্যে সাতটি অনুপস্থিত। আরও রহস্যের বিষয় হলো—সোনা ও হীরা অক্ষত থাকলেও চুরি হয়েছে শুধু অস্ত্র।
ঘটনার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সিআইডির ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে তালা ভাঙার সরঞ্জামসহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে।
তদন্তে জানা গেছে, ওই ভল্টে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য আমদানি করা এবং বেসরকারি অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষিত ছিল। তবে আগুনে কিছু নথি পুড়ে যাওয়ায় মোট অস্ত্রের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, কার্গো হাউস এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আগুনে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চোর শনাক্তে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। তদন্তকারীরা ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে এখনো উত্তর মিলছে না সবচেয়ে বড় প্রশ্নটির—এত কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও বিমানবন্দরের ভল্ট থেকে অস্ত্র চুরি সম্ভব হলো কীভাবে?
