দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত জুলাই সনদের আলোকে প্রণীত ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন ও প্রশাসনিক সংস্কারের এই উদ্যোগের লক্ষ্য—পুলিশ বাহিনীতে স্বচ্ছতা, পেশাদারিত্ব এবং জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করা।
প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, খসড়াটি এখন অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে এবং এটি কয়েক দিনের মধ্যেই উপস্থাপন করা হবে।
সূত্রের ভাষ্য, অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারের পথে এটি একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে আধুনিক পুলিশ প্রশাসনের ভিত্তি তৈরি হবে।
কমিশনের কাঠামো ও নেতৃত্ব
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে খসড়াটি প্রস্তুত করেছে। অধ্যাদেশে প্রস্তাব করা হয়েছে—একজন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা (গ্রেড–২ বা তার ঊর্ধ্বে), একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি বা সমমানের পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ একাডেমির সাবেক অধ্যক্ষ, কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো আইন বা অপরাধতত্ত্বের অধ্যাপক এবং অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানবাধিকার কর্মী।
চেয়ারম্যানের মর্যাদা হবে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান এবং সদস্যদের মর্যাদা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান। প্রত্যেক সদস্য চার বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন, তবে পুনঃনিয়োগের সুযোগ থাকছে না।
কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যক্রম
খসড়া অনুযায়ী, কমিশনের যেকোনো নির্দেশনা বা সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে হবে। কোনো সুপারিশ বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিলে সেই বিষয়টি কমিশনকে জানিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখতে হবে।
এছাড়া, কমিশন গঠনের জন্য সাত সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি থাকবে। এতে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত এক বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি সহ অন্যান্য সদস্যরা। নির্বাচন প্রক্রিয়া ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, এবং অন্তত পাঁচ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হবে।
অধ্যাদেশে কমিশনের প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক কাঠামো, সদস্যদের নিয়োগ ও অপসারণ, পুলিশ শৃঙ্খলা, অভিযোগ তদন্ত, পুলিশ সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণ, এবং পুলিশ প্রধান নিয়োগের নীতিমালা সম্পর্কিত বিস্তারিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
