ঢাকার পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামটা বৃহস্পতিবার সকালে ছিল একটু ভিন্ন রঙে সাজানো। চারদিকে সামিয়ানা, নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা, আর মাঠজুড়ে আর্চারদের ব্যস্ততা। শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, যেখানে অংশ নিচ্ছে ৩০টিরও বেশি দেশ। জাতীয় স্টেডিয়াম ও আর্মি স্টেডিয়ামে ছয় দিনের এই আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
এই ব্যস্ততার মাঝেই চোখে পড়ে এক তরুণীকে— হাতে ধনুক, চোখ টার্গেটে নিবদ্ধ। তাঁর প্র্যাকটিস কিটে লেগে থাকা প্যালেস্টাইনের পতাকা যেন গল্প বলে দিচ্ছে এক অন্য রকম লড়াইয়ের।
তিনি রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ, গাজার মেয়ে, প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধি। প্রথমবারের মতো এসেছেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।
বাংলাদেশে পা রাখতেই মুগ্ধ রাশা। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন,
“বিমানবন্দর থেকেই সবাই খুব আন্তরিক। রাস্তায়, হোটেলে, সর্বত্র মানুষের ভদ্রতা ও ভালোবাসা আমাকে ছুঁয়ে গেছে। সত্যিই, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ।”
রাশার জন্ম গাজার বুকে, যেখানে প্রতিদিনই জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ। ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহতা তাঁর পরিচিত বাস্তবতা। সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও নিজের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি— আর্চারি খেলার মাধ্যমে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা।
বছর চারেক আগে শুরু হয় তাঁর আর্চারি যাত্রা। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত প্র্যাকটিস। ফিলিস্তিন আর্চারি ফেডারেশন তাঁর বড় সহায়।
বাংলাদেশে এসে রাশা শুধু প্রতিযোগিতা নয়, পেয়েছেন গভীর মানবিক সংযোগও। জানালেন,
- “আমরা জানি, বাংলাদেশ সবসময় প্যালেস্টাইনের পাশে আছে। আমি এখানে এসে সেই ভালোবাসা অনুভব করেছি। একদিন আমরাও আপনাদের প্যালেস্টাইনে স্বাগত জানাব, ইনশাআল্লাহ।”
রাশার অনুপ্রেরণার পেছনে রয়েছেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান আর্চারি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল। তিনি বলেন,
- “রাশা আর অন্যান্য ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের আমি নিজের সন্তানের মতো দেখি। ওরা আমাকে ‘বাবা’ বলে ডাকে। রাশার সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক পুরোনো— এবার অবশেষে তাকে বাংলাদেশে আনতে পেরে সত্যিই আনন্দিত।”
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে রাশা দারুণ খুশি। ইতিমধ্যে তিনি বাংলা শেখারও চেষ্টা করছেন। মিষ্টি খাওয়ার পর ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন—
“প্যালেস্টাইন, বাংলাদেশ ভালোবাসি।”
এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রাশার লক্ষ্য স্পষ্ট— রিকার্ভ ইভেন্টে পদক জয় এবং বাংলাদেশের মাটিতে গর্বভরে ওড়ানো প্যালেস্টাইনের পতাকা।
