রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে তিন বছর ধরে। প্রতিদিনই গোলাগুলির শব্দ, ড্রোন হামলা আর ধ্বংসস্তূপে ভরা দৃশ্য। এই রণক্ষেত্রে শুধু রুশ বা ইউক্রেনের সৈন্যই নয়—আরও অনেক দেশের তরুণ লড়ছে বেঁচে থাকার লড়াই। সেই তালিকায় উঠে এসেছে এক বাংলাদেশি তরুণের নাম—সোহেল সরদার নীরব।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ছেলে সোহেল এখন রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই তিনি একের পর এক ভিডিও দিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে। কখনো হাতে তুলে ধরছেন বিস্ফোরিত ড্রোন, কখনো দেখাচ্ছেন ভাঙাচোরা ভবন আর ধোঁয়ায় ঢেকে থাকা যুদ্ধভূমির দৃশ্য।
এক ভিডিওতে সোহেল বলেন,
গতকাল আমি মারা যেতাম ড্রোনের কারণে। ঠিক মাথার উপর দিয়েই আসছিল। ভাগ্যিস আমাদের এখানে নেটওয়ার্ক জ্যামার ছিল, ওটাই আমাদের বাঁচায়।
তার এসব ভিডিও এখন বাংলাদেশে ভাইরাল হয়ে গেছে। লাখো মানুষ দেখছেন, কেউ আতঙ্কে, কেউ আবার অনুরোধ করছেন এমন ভয়াবহ দৃশ্য না দেখাতে। যুদ্ধের ভয়, মৃত্যু আর টিকে থাকার লড়াই—সব মিলিয়ে সোহেল এখন অনলাইনে আলোচিত নাম।
ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে জানা গেছে, সোহেল আগে ঢাকার কদমতলার একটি স্কুলে পড়তেন। ধারণা করা হচ্ছে, কাজের আশায় রাশিয়ায় গিয়ে পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এখন তার প্রতিদিন কাটছে যুদ্ধের ভেতর, মাথার উপর ড্রোন ঘুরছে আর চারদিকে বিস্ফোরণের আওয়াজ।
শুধু সোহেলই নন, আরও অনেক বাংলাদেশিও একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে—কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে পরে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে যুদ্ধে অংশ নিতে। কেউ নিখোঁজ, কেউ নিহত। যেমন চট্টগ্রামের অমিত বরুয়া, সাভারের আশিকুর রহমান কিংবা চাঁদপুরের নাসির আহমেদ—যাদের জীবন শেষ হয়েছে ইউক্রেনের মাটিতে।
ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রায় এক হাজার বিদেশি রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নাগরিক, যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়।
এই তরুণদের জীবনের গল্প এখন যেন এক অবিরাম দুঃস্বপ্ন—কেউ ভিডিওতে যুদ্ধ দেখাচ্ছেন, কেউ আর কোনোদিন ফিরছেন না। সোহেল সরদারের ভিডিওগুলো তাই শুধু ভাইরাল কনটেন্ট নয়, বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভেতর লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের বাস্তব চিত্র।
